মরণ উত্তর
বাবা মারা
যাওয়ার পর থেকেই একটা ভাবনা। মৃত্যু হয়তো এক
গ্রহান্তর।
সময়ের ভিন্ন অক্ষে অন্য বাস্তবতা। তাই হয় যদি
তাহলে সেখানে
আমার ঠাকুর্দা,বাবা,তুতু,দিদিভাই,বাবু ...
এবং ...
এবং ঠাকুমা।
প্রতিজন
চরিত্রই 'স্তান' থেকে 'স্থানে' আসা সেই আজব চিজ
যাদেরকে
এতাবৎ 'রিফিউজি', 'উইপোকা' বলা হয়
প্রকাশ্যেই,'স্থানে'।
আর সব 'উই'
পরিবারহেন এ সকল চরিত্রদেরো ইতিহাস
'সুবর্ণরেখা','ছিন্নমূল',মেঘে
ঢাকা তারা'। ল্যাং খাওয়া
প্রতি পদে
'থলুয়া'দের প্যাঁচে। এবং অন্তিমে
কারো কারো
টিঁকে যাওয়া
মানচিত্রে
একটি বিন্দুবৎ। আর সব 'উই' পরিবারহেন
এ গল্পেও
পারিবারিক কূটনীতি,খেয়োখেয়ি নীল সামন্তরক্তে
সীমান্ত
পেরিয়ে আসা দ্বান্দ্বিকতাজাত।
অতএব কালনেমির
এই ভাগ বাটোয়ার প্রায় ২৫ বছর পরে জন্মেও
যখনই 'বুঝের'
হলাম, পষ্ট চোখে দেখলাম
এই পরিবার
আবর্তিত দুটি অক্ষে এবং এ'ও ক্রমে জানাগেলো যে
একদা দুইপক্ষে
ঘটেছে সমরও। পরে
'সপরিবারে
দেখিবার' বাংলা সিনেমার অশ্রু সজল মহামিলন সীন্টিতে হাজির থাকলেও
আদতে কিন্তু
দিদিভাই অর্থাৎ বাবার ছোটোপিসীর শিবেরেই ছিলাম
আমি নিজে,বাবা,
আমার ছোটোপিসী তুতু। বাবাউ, যিনি আমার ঠাকুর্দার মামা,
যিনি ঠাকুর্দারই
সমান বয়সী, তিনিও এই শিবিরেই। বকলমে। শুধু ছোটোকাকু
প্রথম থেকেই
কোনো শিবিরে ছিলনা আর আমার ঠাকুর্দা যে এই মহামিলন সীনে
না থাকার
সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন তার কারণ
'রিফিউজি'
অলঙ্কারে ভূষিত হয়ে 'স্থানে' আসার কয়েক বছরের মধ্যেই
তাঁর পরলোকে
গমন সাতটি সন্তান ও একজন সদ্য যুবতী পত্নীকে রেখে যে পত্নী, পরে,
'পাশ্শালার
মাস্টরনি' অভিধা নিয়ে বহন করেছিলেন
অপর শিবিরের
অর্থাৎ বাবা আর ছোটোপিসী বাদে
বাকি পাঁচ
সন্ততির ভার।
ঠাকুর্দা
আর আমার ছোটোপিসী ছাড়া তেমন অকালে আর পরলোকে যাননি কেই।
বাবু,দিদিভাই
গেলেন আশি ছুঁয়ে বা পেরিয়ে। আমার বাবা ৮২ তে।
বাবা মারা
যাওয়ার পর থেকেই একটা ভাবনা। মৃত্যু হয়তো এক
গ্রহান্তর।
সময়ের ভিন্ন অক্ষে অন্য বাস্তবতা। তাই হয় যদি
তাহলে সেখানে
আমার ঠাকুর্দা,বাবা,তুতু,দিদিভাই,বাবু ...
এবং ...
এবং ঠাকুমা।
এখনো কি অক্ষ আলাদা? পক্ষ আলগা?
বাবা,তুতু,দিদিভাই,বাবু
একত্রে, এক বাসায় আর ঠাকুমা
সেই যৌবনেই
বিধবা, আলাদা বাড়িতে
তাঁর পক্ষের
কারোর আসার অপেক্ষায়?
ছবিটির বিষাদে
ডুবে যেতে যেতে এক সময় মনেহয়, না,
ঠাকুমা সম্ভবতঃ
একা নন। আমার ঠাকুর্দা কি যৌবনেই হারানো পত্নীকে আবার পেয়ে
তাঁর কাছে
থাকবেন না?
ভাবি, মৃত্যু
মৃতের কাছে মায়ার কতোটা গিঁট কেটে দিতে পারে ...
১১/০১/২০২২
-- ২৫/০১/২০২২